সাহসী সাংবাদিকতা পদক

রোজিনা ইসলামের হাতে সাহসী সাংবাদিকতার পদক তুলে দেওয়া হচ্ছে

রোজিনা ইসলামের হাতে সাহসী সাংবাদিকতার পদক তুলে দেওয়া হচ্ছেছবি: প্রথম আলো

২০২১ সালের জন্য শহীদ সেলিনা পারভীন সাহসী সাংবাদিকতা পদক পেয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। প্রতিবছর সাহসী সাংবাদিকতার জন্য একজনকে এ পুরস্কার দিয়ে থাকে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র (বিএনএসকে)।
এ ছাড়া ২০২০ সালের শহীদ সেলিনা পারভীন সাংবাদিকতা পদক দেওয়া হয় একাত্তর টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাবেরী মৈত্রেয়কে। ২০২০ সালে সাহসী সাংবাদিকতায় কাউকে না পাওয়ায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে নির্বাচন করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুজনের হাতে এ পদক তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুই বিজয়ীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় এবং ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘১৯৭১ সালে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যে বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সেলিনা পারভীন ছিলেন একমাত্র নারী।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য শিলালিপি সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে আলবদররা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তাঁর এই আত্মদান যেন আমরা ভুলে না যাই। তাঁর স্মৃতিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

 

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক। তিনি বিভিন্ন সময়ে সুশাসন ও অনিয়ম নিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলাসহ দেশের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি বলেন, মিডিয়া হাউসগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে হবে। তাঁদের নীতিনির্ধারণী পদে আসার পথ সুগম করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের স্বার্থে আলাদা আচরণবিধি ও নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও অধ্যক্ষ মাহফুজা খানম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ সেলিনা পারভীনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, তাঁর নাম কোথাও উচ্চারিত হয় কি না, আমার জানা নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল, তাঁকে আগামী প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা। কিন্তু সরকারিভাবে সেটা করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নারী সাংবাদিক কেন্দ্র সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের নামে পদক দিচ্ছে, এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালে যিনি সাহসী পদক পেয়েছেন, সেই রোজিনা ইসলাম এই পদক পাওয়ার অত্যন্ত যোগ্য। সাহসিকতার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাই।’

 

দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান বলেন, এটা ঠিক সাংবাদিকতায় নারীরা এগিয়ে আসছেন, তবে সংখ্যায় এখনো কম। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এখনো নারীদের প্রতিনিধিত্ব নেই। নারীদের এসব বিষয়ে তুলে আনতে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সেলিনা পারভীনের মতো সাহস নিয়ে নারীদের এই পেশায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

 

অনুষ্ঠানের আয়োজক ও অতিথিদের সঙ্গে পদকপ্রাপ্ত দুজন

অনুষ্ঠানের আয়োজক ও অতিথিদের সঙ্গে পদকপ্রাপ্ত দুজনছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক যোগ্য সাংবাদিকদের শহীদ সেলিনা পারভীন সাহসী সাংবাদিকতা পদক দেওয়ায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র ২০১৯ সালে ‘শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সাংবাদিকতা’ পদক প্রবর্তন করে। করোনার কারণে গত দুই বছর পদক বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাপ্তাহিক বেগম, ললনা, শিলালিপিসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সেলিনা পারভীনকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। ১৭ ডিসেম্বর মিরপুর বধ্যভূমিতে তাঁর মরদেহ শনাক্ত হয়, ১৮ ডিসেম্বর আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।