সরকারি–বেসরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত সংবাদমাধ্যম প্রত্যাশা করি

সাক্ষাৎকার

সরকারি–বেসরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত সংবাদমাধ্যম প্রত্যাশা করি

গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে? রাষ্ট্রের নানা আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে দমিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, এসব প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সাম্প্রতিক আন্দোলনে। এ নিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ–এর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

কাজী আলিম-উজ-জামান

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২১, ১১: ৩৫

 

অ+অ-

 

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ

প্রথম আলো: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা বাতিলের জন্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন দাবি জানিয়ে এলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এই আইনের অপপ্রয়োগের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। এখন অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের প্রয়োগও দেখা গেল। এ পরিস্থিতি কি সংবাদমাধ্যমকে চাপে রাখার কৌশল?
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দরকার আছে। তবে এই আইনের সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ–সংশ্লিষ্ট কিছু ধারাকে আমি কুৎসিত মনে করি। এসব ধারা লেখার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা আগেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই সব ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছি, আবারও জানাচ্ছি। আর অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টটি সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য, সংবাদমাধ্যমকর্মীদের জন্য নয়। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নামে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলাকে অশোভন পদক্ষেপ মনে করি। আশা করব, এটা প্রত্যাহার করা হবে। তাঁকে এ দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। আমরা সরকারি, বেসরকারি—সব ধরনের প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপমুক্ত সংবাদমাধ্যম প্রত্যাশা করি।
 

প্রথম আলো: সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সাম্প্রতিক আন্দোলনে সংবাদমাধ্যম সুরক্ষা আইনের দাবি এসেছে।
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৪০/৪৫টি দেশে সংবাদমাধ্যম সুরক্ষা আইন আছে। যেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহে বাধা থাকে, সেখানে এ রকম আইন দরকার। তথ্য অধিকার আইন এই সরকারের আমলে হয়েছে। তারপরও আমাদের দেশেও সংবাদমাধ্যম সুরক্ষা আইন দরকার। এই সুরক্ষা হতে পারে পরিপূর্ণভাবে। ধরা যাক, উপকূলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। তখন প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেভাবে যেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান, সাংবাদিকেরাও যেন একই অধিকার পান। এ রকম সুরক্ষা চাচ্ছি আমরা। এর পাশাপাশি অবাধ তথ্যপ্রবাহ এবং সাংবাদিকদের কাজের সুরক্ষা চাচ্ছি।
 

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রথম আলো: দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিবেশ কতটা বজায় রয়েছে বলে মনে করেন?
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: আমাদের এখানে সাগর-রুনি, তনু হত্যাকাণ্ডে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা তেমন হয়নি। যদিও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিবেশ দক্ষিণ এশিয়ায় খুব ভালো নেই। তারপরেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা দরকার আছে। এতে রাষ্ট্রই লাভবান হয়। সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় তথ্য–উপাত্ত দিয়ে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারে।
 

প্রথম আলো: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত ১৬ মাসে সাংবাদিকদের নামে ৪৬টি মামলা হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে সেলফ সেন্সরশিপ তৈরি হচ্ছে কি না।
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে প্রভাবশালী মহল সাংবাদিকদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই আইনে মামলার দরকারই হয় না, যদি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবাদ করেন অথবা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এসব না করে সরাসরি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা হচ্ছে।
 

বিজ্ঞাপন

প্রথম আলো: সাম্প্রতিক আন্দোলনে সাংবাদিক নেতাদের অনেকে বলছেন, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি করার চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হচ্ছে?
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: সব সময় সুযোগসন্ধানী মহল পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনায় কায়েমি স্বার্থবাদীরা সুযোগ নিয়েছে। সরকার ও সংবাদমাধ্যমকে মুখোমুখি করে দিয়েছে।
 

প্রথম আলো: সংবিধান নিশ্চয়তা দেওয়ার পরও মতপ্রকাশে ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে সরকারের মধ্যে বাধা কারা?
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: সরকারের বাইরেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক-সামাজিক মহলের স্বার্থ যখন সাংবাদিকদের কারণে ক্ষুণ্ন হয়, তখন তারাই এমন বাধার সৃষ্টি করে। আর এই মহলের বেশির ভাগই থাকে সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়।
 

প্রথম আলো: রোজিনা ইসলাম ইস্যুতে সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত ঐক্য দেখা গেল। সব পরিস্থিতিতে এই ঐক্য ধরে রাখার উপায় কী?
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: সাংবাদিক পেশাগত ঐক্য আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ কিছু কারণে বিভক্তি আছে, যা নব্বইয়ের পর থেকে দেখছি। এই বিভাজনটা মাথার ওপরে থাকার কথা ছিল না। এ কারণে পেশার মর্যাদা, অধিকার, দাবি-দাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সাংবাদিকদের অধিকার-মর্যাদার ক্ষেত্রে যেন কোনো বিভেদ না থাকে। পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকতার পেশাজীবীদের এক ছাতার নিচে থাকতে হবে। অধিকার রক্ষায় একসঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
 

প্রথম আলো: সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
 

কুদ্দুস আফ্রাদ: সাংবাদিক ইউনিয়নের দুটি কাজ—পেশাগত মর্যাদা রক্ষা ও প্রশিক্ষণ। পেশাগত মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় আমরা সব সময় সোচ্চার রয়েছি। তবে প্রশিক্ষণে আমরা হয়তো পিছিয়ে আছি। বছরে আমরা চার–পাঁচটা কোর্স করাচ্ছি। করোনাকালে এটা করতে পারিনি।